ইসলাম আত্মহত্যাকে কঠোরভাবে দেখে। What does Islam say suicide?

ইসলাম | অন্যান্য ধর্মের মতো, ইসলাম আত্মহত্যাকে কঠোরভাবে পাপ মনে করে এবং আধ্যাত্মিক যাত্রার জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করে। যাইহোক, মানুষকে ভুল করার জন্য দায়বদ্ধ করা  হয়, এইভাবে, যদি কোন ব্যক্তি তার কষ্ট কে কারো কাছে সেয়ার না করতে পারে তবে আরও কতো বাব একই ভাবে মারা যাবে কে জানে। কিন্ত আমরা বুঝতে চাই না যে বাবা-মা তাদের সারা জীবনটা আমাদের জন্য ত্যাগ করে। আমরা বাবা-মাদের খেয়াল রাখড়াচ ''মা-বাবার পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত''।

ইসলাম আত্মহত্যাকে কঠোরভাবে দেখে। What does Islam say about suicide?



আরও পড়ুনঃ খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারিতা। Health benefits of dates

যারা বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহকে অবিশ্বাস করেছিল তাদের জন্য ফলাফলটি দ্ব্যর্থহীনভাবে নেতিবাচক বলে মনে হয়। কুরআনে, যদিও আল্লাহকে 'পরম করুণাময়, পরম দয়ালু' বলা হয়েছে এবং তিনি সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন, অবিশ্বাসের মহান পাপকে ক্ষমার অযোগ্য বলে গণ্য করা হয়। তা সত্ত্বেও, একটি অজনপ্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে জিহাদের সময় সংঘটিত ক্রিয়াকলাপ যার ফলে একজনের নিজের মৃত্যু ঘটে তা আত্মহত্যা বলে বিবেচিত হয় না, এমনকি যদি আইনের প্রকৃতি অনুসারে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় (যেমন আত্মঘাতী বোমা হামলা)। 

আরও পড়ুনঃ জুমার দিনের কাজগুলি যেনে নিন । Find out about Friday's work

এই ধরনের কাজগুলিকে পরিবর্তে শাহাদাতের একটি রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যাইহোক, এর বিপরীতে কুরআনের প্রমাণ রয়েছে যে নির্দোষ হত্যার সাথে জড়িতরা জালেম ও সীমালঙ্ঘনকারী। তা সত্ত্বেও, কেউ কেউ দাবি করেন যে ইসলাম শুধুমাত্র অন্যায়কারী ও অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার ব্যবহারের অনুমতি দেয় যদি কেউ মনে করে যে অন্য কোন বিকল্প নেই এবং অন্যথায় জীবন মৃত্যুতে শেষ হবে।

আত্মহত্যা হল নিজের জীবন শেষ করার কাজ। এটি অনেক ধর্মে একটি পাপ এবং কিছু বিচারব্যবস্থায় একটি অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে, কিছু সংস্কৃতি এটিকে কিছু লজ্জাজনক বা আশাহীন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একটি সম্মানজনক উপায় হিসেবে দেখেছে।

আত্মহত্যা হিসাবে বিবেচনা করা হলে, মৃত্যুকে অবশ্যই একটি কেন্দ্রীয় উপাদান এবং আইনের উদ্দেশ্য হতে হবে এবং শুধুমাত্র একটি প্রায় নির্দিষ্ট পরিণতি নয়। তাই, আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণকে আত্মহত্যার পরিবর্তে এক ধরণের বোমা বিস্ফোরণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যখন শাহাদাত জরুরী পরিস্থিতিতে অন্যদের সেবায় আত্মত্যাগ এবং যুদ্ধে বেপরোয়া সাহসিকতা সাধারণত ধর্মীয় বা আইনী নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা পায়।

কুমিল্লার একজন শ্রদ্ধেয় আইনজীবী তার নিসঙ্গতা আর একাকীত্বতা দূর করতে ৯০ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন বলে আপনারা এই বিয়ে নিয়ে প্রচন্ড ট্রল করেছিলেন। আমরা মানুষ রাই একটা আজব জাতি যারা কি না কোন কিছু ভুল সুদরানোর সুযোগ দেই না।


ঠিক একই বয়সের একজন মানুষ আজ নিসঙ্গতা আর একাকীত্বের যন্ত্রনা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে সেই আপনারাই আবার খুব স্যাড হয়ে যাচ্ছেন। 

সমাজের বিত্তবান ও শিক্ষিত পরিবারের একজন বাবা অভিমান ও হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন; আরও কত পিতার আহত আত্মা হয়তো মৃত্যুর জন্য ছটফট করছে। 

মুসলিম পরিবারে ইসলামচর্চা না থাকা এ ধরণের ঘটনার প্রধান কারণ। পরিবার ও সন্তান যদি সো কলড মুসলিম না হয়ে সত্যিকারের মুসলিম হয় তাহলে সে পরিবারে এ ধরণের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটবে না, সেটা অনেকটাই নিশ্চিত করে বলা যায়। 

যে স্ত্রী-সন্তান কুরআনের আলো পেয়েছেন, সুন্নাতে রাসূলের সন্ধান পেয়েছেন তারা পৃথিবীর কোনো কিছুর লোভেই স্বামী কিংবা বাবাকে একাকী ফেলে রেখে বিদেশে পাড়ি জমাবেন না। 

আরও পড়ুনঃ  যৌনতা নিয়ন্ত্রণ করার সেরা উপায়। Ways to control sexuality

এর আগে (পরিবার ও সন্তান বিদেশে থাকায়) নিঃসঙ্গ ফ্ল্যাটের টয়লেটের সামনে ড. তারেক শামসুর রহমানের পড়ে থাকা লাশের ছবি আমাদের ব্যথিত করেছিল। গতকাল বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, নতুন বছরের প্রথম মাসে ভার্সিটি পড়ুয়া শতাধিক উচ্চশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। 

ভোগবাদের চোখ ধাঁধাঁনো কালচার আপনাকে রিয়েল সুখী করবে না কখনো, সুখের অভিনয়কারী বানাবে বড়জোর।

পবিত্র কুরআন থেকে :

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা কবীরা গুনাহ। শিরকের পর সবচে বড় গুনাহ। সকল ফিকহবিদ এবং চার মাজহাবেই আত্মহত্যা হারাম। কারণ, আল্লাহ তা’আলা মানুষকে মরণশীল হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। ধনী-গরীব, বিদ্বান-মূর্খ, রাজা-প্রজা সবাইকে মরতেই হবে।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۖ ثُمَّ إِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ

‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ {সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত : ৫৭}

আর এ মৃত্যু দান করেন একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া কেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারে না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

هُوَ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ

‘তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান আর তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।’ {সূরা ইউনুস, আয়াত : ৫৬}

উপরোক্ত আয়াতদুটি থেকে বুঝা যায় মানুষের মৃত্যু ঘটানোর কাজটি একমাত্র আল্লাহর। অতএব কেউ যদি কাজটি নিজের হাতে তুলে নেন, নিজের মৃত্যু ঘটান নিজের হাতে তবে তিনি অনধিকার চর্চাই করবেন। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। কেউ অনধিকার চর্চা প্রত্যাশা করে না। ইসলামে তাই আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে গণ্য করা হয়েছে। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহ বিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং এর পরিণামের কথা ভাববার জন্য কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে মহা পবিত্র আল কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  জুম্মা মুবারক স্ট্যাটাস বাংলা । Jumma Mubarak status in Bangla

আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,

وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا - وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗا وَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا

‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০}

আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ

‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫}

হাদীসে নাববী থেকে:

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাই কাজটি থেকে নানাভাবে বারণ করেছেন। এ থেকে মানুষকে সতর্ক করেছেন। যেমন :

ছাবিত বিন যিহাক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَىْءٍ فِى الدُّنْيَا عُذِّبَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ».

‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা হবে।’ [বুখারী : ৫৭০০; মুসলিম : ১১০]

অপর এক হাদীছে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَهْوَ فِى نَارِ جَهَنَّمَ ، يَتَرَدَّى فِيهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ تَحَسَّى سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَسَمُّهُ فِى يَدِهِ ، يَتَحَسَّاهُ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ ، فَحَدِيدَتُهُ فِى يَدِهِ ، يَجَأُ بِهَا فِى بَطْنِهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ».

‘যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে। [সহীহ বুখারী : ৫৪৪২; মুসলিম : ১০৯]

আরও পড়ুনঃ বিবাহিতা অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত কারার ৫ টি উপায়

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« مَنْ خَنَقَ نَفْسَهُ فِي الدُّنْيَا فَقَتَلَهَا خَنَقَ نَفْسَهُ فِي النَّارِ ، وَمَنْ طَعَنَ نَفْسَهُ طَعَنَهَا فِي النَّارِ ، وَمَنِ اقْتَحَمَ ، فَقَتَلَ نَفْسَهُ اقْتَحَمَ فِي النَّارِ».

‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শার আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে। আর যে নিজেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সে নিজেকে উপর থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।’ [সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৯৮৭; তাবরানী : ৬২১]

জুনদুব ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ رَجُلٌ بِهِ جُرْحٌ فَجَزِعَ فَأَخَذَ سِكِّينًا فَحَزَّ بِهَا يَدَهُ فَمَا رَقَأَ الدَّمُ حَتَّى مَاتَ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى بَادَرَنِي عَبْدِي بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ».

‘তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ [বুখারী : ৩২৭৬; মুসলিম : ১১৩]

সুতরাং সময় থাকতে ফিরে আসুন, কুরআনের ছায়ায়, ইসলামের আলোয়। পরিবারকে আর যা শেখান বা না শেখান, ইসলামটা ভালো করে শেখান। মহান আল্লাহ বলেন, “জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণে চিত্ত প্রশান্ত থাকে ”। (সূরা রা’দ-২৮)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন