এটা কি বলে যে নির্দিষ্ট ধরণের সঙ্গীত অনুমোদিত এবং বাকিগুলি অনুমোদিত নয়? নাকি কুরআন পুরোপুরি সঙ্গীতের বিরোধিতা করে? আধুনিক সময়ে বেড়ে ওঠা, আমাদের মধ্যে অনেকেই সঙ্গীতের দ্বারা মোহিত হয়েছি এবং এটিকে সম্পূর্ণরূপে এড়ানো কঠিন বলে মনে হয়েছে। আমরা অনেকেই ভাবছি যে একটি বা দুটি গান শোনা ঠিক হবে কিনা।
কুরআনের কথাঃ
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَہَا ہُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ ﴿۶﴾
বাংলা বর্ননাঃ
আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব। মানুষের মধ্যে কেহ কেহ অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করেএবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদেরই জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
বাংলা তাফসিরঃ
কতক মানুষ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশ্যে অজ্ঞতাবশতঃ অবান্তর কথাবার্তা (গান-বাজনা) ক্রয় করে আর আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি।
عَنْ نَافِعٍ قَالَ سَمِعَ ابْنُ عُمَرَ مِزْمَارًا قَالَ فَوَضَعَ إِصْبَعَيْهِ عَلَى أُذُنَيْهِ وَنَأَى عَنْ الطَّرِيقِ وَقَالَ لِي يَا نَافِعُ هَلْ تَسْمَعُ شَيْئًا قَالَ فَقُلْتُ لاَ قَالَ فَرَفَعَ إِصْبَعَيْهِ مِنْ أُذُنَيْهِ وَقَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَسَمِعَ مِثْلَ هَذَا فَصَنَعَ مِثْلَ هَذَا.
নাফে‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
একদা ইবনু ওমর (রাঃ) বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেলে তিনি তাঁর দুই কানে দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গেলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, নাফে’ তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? আমি বললাম, না। তিনি তার দুই আঙ্গুল দুই কান হতে বের করে বললেন, আমি একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনে কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গিয়েছিলেন এবং আমাকে এভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন যেভাবে আজ তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম (ছহীহ আবূদাঊদ হা/ ৪৯২৪, সনদ ছহীহ)।
অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রের শব্দ যেন কানে না আসে তার সম্ভবপর চেষ্টা করতে হবে।
عَنْ أَبِيْ مَالِكِ الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِيْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ.
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ:
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ‘অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’ (বুখারী হা/৫৫৯০)
عَنْ أَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوْهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوْهُنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ.
আবু ওমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় কর না, তাদের ক্রয় কর না, তাদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ে দিয়ো না, তাদের উপার্জন হারাম’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০)।
সঙ্গীত সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
👉"এবং মানবজাতির মধ্যে এমন ব্যক্তি যে আল্লাহর পথ থেকে (মানুষকে) বিপথগামী করার জন্য অলস কথাবার্তা (অর্থাৎ সঙ্গীত, গান) ক্রয় করে" [লুকমান ৩১ঃ৬] উম্মাহর আলেম, ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন: এর অর্থ গান করা। মুজাহিদ (রহঃ) বলেনঃ এর অর্থ হল ঢোল (তাবল) বাজানো।
আল-হাসান আল-বাসরী (রহঃ) বলেনঃ এই আয়াতটি গান ও বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেছেন সাহাবা ও তাবিয়ীনদের ব্যাখ্যা, যে ‘অর্থক কথা’ গান গাওয়াকে বোঝায়, তা যথেষ্ট।
👉 "[আল্লাহ ইবলীসকে বললেন:] এবং ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে যাদেরকে আপনি আপনার কণ্ঠস্বর (যেমন গান, সঙ্গীত এবং আল্লাহর অবাধ্যতার জন্য অন্য যে কোন আহ্বান) দিয়ে পারেন তাদেরকে বোকা বানিয়ে ফেলুন" [আল-ইসরা' ১৭:৬৪]
👉 “তাহলে কি আপনি এই তিলাওয়াত (কুরআন) সম্পর্কে বিস্মিত হন? এবং আপনি এটি দেখে হাসেন এবং কাঁদেন না, আমোদ-প্রমোদে (গান গাওয়া) আপনার (মূল্যবান) জীবনকাল নষ্ট করা” [আল-নাজম৫৩:৫৯-৬০]
গান সম্পর্কে হাদিস
আবূ উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “গান গাওয়া দাসীদের বিক্রি করো না, তাদেরকে ক্রয় করো না এবং তাদেরকে শিক্ষা দিও না। এ ব্যবসায় ভালো কিছু নেই এবং এগুলোর দাম হারাম। এ ধরনের বিষয় সম্পর্কে আয়াতটি নাযিল হয় (অর্থের ব্যাখ্যা) : 'আর মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি যে আল্লাহর পথ থেকে (মানুষকে) বিপথগামী করার জন্য অসার কথাবার্তা (অর্থাৎ সঙ্গীত, গান) ক্রয় করে' [লুকমান ৩১ঃ৬] "
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই এমন কিছু লোক থাকবে যারা যিনা, রেশম, মদ এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল করবে (বুখারী ৫৫৯০)
ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেছেন: এটি একটি সহীহ হাদীছ যা আল-বুখারী তার সহীহ বর্ণনা করেছেন, যেখানে তিনি এটিকে দলীল হিসাবে উদ্ধৃত করেছেন এবং বলেছেন যে এটি মুআল্লাক ও মাজযুম। তিনি বলেন: যারা মদকে অনুমতি দেয় এবং অন্য নামে ডাকে তাদের সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে তার অধ্যায়।
Nice
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন