বন্ধুর বর্ণনাঃ
বন্ধু কাকে বলে?
টাক দিয়ে, কথা দিয়ে,অর্থ দিয়ে, সাহায্য করলেই কেবল বন্ধু হওয়া যায়না। বন্ধু শব্দটা ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তির যদি একজন বন্ধু থাকে সেই বন্ধ কারনেই তার জান্নাত হতে পারে।
কিন্তু আজকে আমরা বন্ধ করি কাকেঃ
১. গাঁজা খোর গাঁজা খোরের বন্ধু
২. বিড়ি খোর বিড়ি খোরের বন্ধু
৩. ইয়াবা খোর ইয়াবা খোরের বন্ধু
৪.নোংরা ছেলে নোংরা ছেলে বন্ধু
৫.নেশা খোর নেশা খোরের বন্ধু
হজরত ইমাম জাফর(রা)বলেছেনঃ
হজরত ইমাম জাফর আস-সাদিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, 'পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সমীচীন নয়। তারা হলো-১.মিথ্যাবাদী,২.নির্বোধ,৩.ভীরু, ৪.পাপাচারী ও ৫.কৃপণ ব্যক্তি। হজরত ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, 'যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তার মধ্যে পাঁচটি গুণ থাকা চাই
দুজন বন্ধুর কথা যদি বলিঃ
এস.এস.সি/এইচ.এস.সি বা যেকোনো পরীক্ষার কথা চিন্তা করুন। একটি ক্লাসের মধ্যে কেউ A+ পায়, কেউবা ফেইল করে। দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একজন পাস, আরেকজন ফেইল।
পাসকৃত বন্ধু কি চাইলে পারবে, ফেইলকৃত বন্ধুর জন্য সুপারিশ করতে? সে কি বলতে পারবে, "আমরা একসাথে পড়ালেখা করতাম, একসাথে ক্লাস করতাম, এখন আমি পাস করলাম, আর সে ফেইল। আমি তো কলেজে/বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তাকে মিস করবো। তাকে আমার সাথে পাস করিয়ে দিন!"
কিয়ামতের দিন বন্ধুকে পাওয়ার আবদারঃ
এমন আবদার করার সুযোগ যেমন তার নেই, তেমনি এমন আবদার কবুল করার সাধ্যও কারো নেই। তবে, কিয়ামতের দিন এমন আবদার করা হবে। জান্নাতে যাবার পর জান্নাতীরা দেখবে তাদের সেইসব ভাইয়েরা জান্নাতলাভ করতে পারেনি, যাদের সাথে তারা একসাথে নামাজ পড়েছে, রোজা রেখেছে, নেক আমল করেছে। তারা জান্নাতে গিয়ে সেইসব 'ভাই' কে মিস করবে। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাবে, "হে আল্লাহ! আমাদের সেইসব ভাইয়েরা কোথায়?"
দ্বীনি ভাইদের চেহারায় দেখে চেনা জাবেঃ
আল্লাহ কোনো কারণে তাদেরকে জাহান্নামে পাঠিয়েছেন। তবে, তাদের চেহারায় জাহান্নামের আগুনের ছাপ লাগবে না। তাদেরকে দেখলেই চেনা যাবে।তখন আল্লাহ জান্নাতীদেরকে অনুমতি দিবেন। তারা গিয়ে তাদের সেইসব বন্ধুদের মধ্যে যাদের এক দিনার পরিমাণ, আধা দিনার পরিমাণ এমনকি এক অণূ পরিমাণ ঈমান দেখতে পাবে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে নিয়ে আসবে।
দ্বীনি ভাইদের কথাঃ
"আল্লাহর অনুমতিক্রমে, জান্নাতি বন্ধুদের সুপারিশে সেইসব জাহান্নামী বন্ধু জান্নাতে প্রবেশ করবে"
সালাফদের কেউ কেউ তার নেককার বন্ধুকে বলতেন, "বন্ধু তুমি যদি জান্নাতে গিয়ে আমাকে খুঁজে না পাও, তাহলে আল্লাহর কাছে আমার জন্য সুপারিশ করো।"
বন্ধু নির্বাচনের ব্যাপারে হাদীসে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ
আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতি নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে। (সুনান আবু দাউদ: ৪৯৩৩, আত-তিরমিযী: ২৩৭৮, সনদ হাসান)
কেমন বন্ধু গ্রহণ করা উচিত?
নবী করীম (ﷺ) সৎ সঙ্গী গ্রহণে উৎসাহিত করেছেন, এবং অসৎ সঙ্গী থেকে দূরে থাকতে তাকিদ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
مَثَلُ الجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالجَلِيسِ السَّوْءِ، كَمَثَلِ صَاحِبِ المِسْكِ وَكِيرِ الحَدَّادِ، لاَ يَعْدَمُكَ مِنْ صَاحِبِ المِسْكِ إِمَّا تَشْتَرِيهِ، أَوْ تَجِدُ رِيحَهُ، وَكِيرُ الحَدَّادِ يُحْرِقُ بَدَنَكَ، أَوْ ثَوْبَكَ، أَوْ تَجِدُ مِنْهُ رِيحًا خَبِيثَةً
‘সৎ ও অসৎ বন্ধুর উদাহরণ আতর বিক্রেতা ও কামারের ন্যায়। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে একটু আতর লাগিয়ে দেবে, অথবা তুমি তার কাছ থেকে আতর ক্রয় করবে, অথবা তুমি তার কাছে আতরের ঘ্রাণ পাবে। আর কামার হয়তো তোমার দেহ বা কাপড় পুড়িয়ে দেবে নয়তো তার কাছ থেকে খারাপ গন্ধ পাবে।’ (বুখারী: ২১০১; মুসলিম: ২৬২৮)
বন্ধু ও তাঁর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কুরআনের বাণী:
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী তারা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করে, আর তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তাদের উপর আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আত্-তাওবাহ, ৯/৭১
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
তোমাদের বন্ধু কেবলমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আর মুমিনগণ যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহর কাছে অবনত হয়। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আর মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তবে নিশ্চয় সেটি আল্লাহর দল আর তারাই বিজয়ী হবে। আল-মায়িদাহ, ৫/৫৫-৫৬
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
أَلاَ إِنَّ آلَ أَبِي - يَعْنِي فُلاَنًا - لَيْسُوا لِي بِأَوْلِيَاءَ إِنَّمَا وَلِيِّيَ اللَّهُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ
সাবধান! অমুক বংশের লোকেরা আমার বন্ধু নয়। বরং আল্লাহ এবং নেককার মুমিনগণ হলেন আমার বন্ধু। (মুসলিম: ৪০৭)
ভালো বন্ধু খুঁজে নিন কারণ কিয়ামতের দিন অসৎ বন্ধুর জন্য আফসোস করতে হবে।
يَٰوَيۡلَتَىٰ لَيۡتَنِي لَمۡ أَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِيلٗا لَّقَدۡ أَضَلَّنِي عَنِ ٱلذِّكۡرِ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَنِيۗ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِلۡإِنسَٰنِ خَذُولٗا
‘হায়! আমার দুর্ভোগ! আমার আফসোস! যদি আমি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ বাণী (কুরআন) পৌঁছার পর; আর শয়তান হল মানুষের জন্যে মহাপ্রতারক।’ আল-ফুরক্বান, ২৫/২৭-২৮
يَوْمَ لا يُغْنِي مَوْلًى عَنْ مَوْلًى شَيْئًا وَلا هُمْ يُنْصَرُونَ
সেদিন কোন বন্ধু অপর বন্ধুর কোনই কাজে আসবে না আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। আদ্-দুখান, ৪৪/৪১
مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلا شَفِيعٍ يُطَاعُ
পাপিষ্ঠদের জন্য কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না আর কোন সুপারিশকারীর সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। আল-মুমিন, ৪০/১৮
وَلا يَسْأَلُ حَمِيمٌ حَمِيمًا
আর (সেদিন) অন্তরঙ্গ বন্ধু অন্তরঙ্গ বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করবে না। আল-মা‘আরিজ, ৭০/১০
الأخِلاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلا الْمُتَّقِينَ
সেদিন বন্ধুগণ হবে একে অপরের শত্রু তবে মুত্তাকীরা (আল্লাহভীরুরা) ছাড়া। আয্-যুখরুফ, ৪৩/৬৭
وَإِنَّ الظَّالِمِينَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ
আর নিশ্চয় যালেমরা একে অপরের বন্ধু আর আল্লাহ হলেন মুত্তাকীদের (আল্লাহভীরুদের) বন্ধু। আল-জাসিয়া, ৪৫/১৯
সুতরাং সত্যবাদী বিশ্বস্তদের বন্ধু বানান কারণ বিশ্বস্ততা ও সত্যনিষ্ঠতা হলো সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার চাবিকাঠি। সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত বন্ধুরা আপনাকে আঘাত দেবে না। পক্ষান্তরে মিথ্যাবাদী ও অবিশ্বস্ত বন্ধু আপনার জন্য খামোখাই অকল্যাণ ডেকে আনবে।
সঠিক কথাঃ
পাপ মানুষের অধঃপতনের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিগণিত হয় যেহেতু পাপ একটি নৈতিক ত্রুটি ।এই বিষয়টির ওপর আলোচনা করা খুবই প্রয়োজন আর তাই এখানে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আল্লাহর যে নিয়ামত দান করেছেন তার শুকরিয়া কখনোই সে আদায় করে না বরং আল্লাহ তা'আলা যা দান করেননি তার চেয়ে বেশি চায় এবং যদি সেটা পূর্ণ হয।তাহলে সে আবার নতুন করে একই জিনিস প্রতিবার সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ একজন ব্যক্তি একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে,যদি তার হিংসা হয় এবং আল্লাহর শোকর গুজার না হয় সব সময় তার ওই চিন্তা থেকে যায় যে,আরো উন্নত একটি বাড়ি ভাড়া নিতে হবে। যখন সে পূর্বের চেয়ে আরো উন্নত পায় তখন সে বলে আরো উন্নত লাগবে। তখন সে আবার নতুন করে অন্যের সম্পত্তির দিকে দৃষ্টি দেবে। এবার সে বলবে অমুকের মত যদি একটি বাড়ি বানাতে পারতাম।
তাই দুনিয়ার মানুষের চাহিদার কোন শেষ নাই যত পাই তত চাই। 👉আরও পড়ুন
উপসংহারঃ
আল্লাহ তাআলা বলছেন,"দুনিয়ার মানুষ শোন তোমরা আমাকে ডাকো আমি আল্লাহ তাআলা তুমি ডাকলেই আমার ডাকে সাড়া দিব " আল-মুমিন, ৪০/৬০"
আজ আমরা আল্লাহ তাআলাকে ডাকতে জানি না। রাতের ৩ টি ভাগের শেষ ১ অংশে এসে আল্লাহ তাআলা শেষ আসমানে নেমে আসে এবং সকল মানুষের উদ্দেশ্য আল্লাহ এ কথা বলতে থাকে " তোমাদের কারো রিজিক লাকবে তোমরা চাও আমি আল্লাহ তাআলা তোমাদের রিজিক বাড়িয়ে দিব"
"তোমাদের কারো বড় বাড়ি লাকবে তোমরা চাও আমি আল্লাহ তাআলা তোমাদের বড় বাড়ি দিব"
"তোমাদের কারো চাকুরী লাকবে তোমরা চাও আমি আল্লাহ তাআলা তোমাদের চাকুরী দিব"
তোমাদের কারো বউ লাকবে তোমরা চাও আমি আল্লাহ তাআলা তোমাদের বউ দিব"
কিন্তু আমরা আল্লাহ তাআলা কে ডাকতে জানি না।
আল্লাহ তাআলা আপনাকে সুস্থতা দান করুক এবং দ্বীনি ভাইদের আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। দ্বীনের পথে কাজ করার তৌফিক দান করুক।
শেষ কথাঃ
আমরা যদি নামাজ না পড়ি, রোজা না রাখি, নেককাজ না করি তাহলে নেককার ভাই-বন্ধুদের সাহচর্য কিভাবে পাবো? তাদের সুপারিশ পেতে হলেও তো অন্তত নেককাজ করতে হবে।
আল্লাহর আমাদের ভালো বন্ধু নির্বাচন করার তৌফিক দান করুন সকলে বলি আমিন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন